রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :: অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পর সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মঙ্গঁলবারচ নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফশিল অনুয়ায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর, বাছাই ১৫ সেপ্টেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ২২ সেপ্টেম্বর এবং ভোটগ্রহণ ১৪ অক্টোবর। এদিকে তফশিল ঘোষনার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচণে অংশ নিতে সম্ভাব্য প্রার্থী, সমর্থক ও এলাকার ভোটারদের মধ্যে আনন্দ উচ্ছাস দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসি জানান, ২০০৩ সালে জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্টিত হয়। এ সময় ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আকমল হোসেন। ২০০৮ সালে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য আকমল হোসেন মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এসময় তিনি ইউপি সদস্য জমির উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে যান। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত আর কোন নির্বাচন হয়নি। চেয়ারম্যান বিহীন পুরনো ইউপি মেম্বারদের দিয়ে কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে চলছে কার্যক্রম। এতে অনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের স্বচ্ছতা-জবাব দিহিতা ও ইউনিয়নের কাঙ্খিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। বিগত ২০০৭ সালে দেশে জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ চলাকালীন সময়ে মীরপুর ইউনিয়নের লহড়ি গ্রামের একটি অংশ নিয়ে জগন্নাথপুর ও বিশ্বনাথ উপজেলার সীমান্ত নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। ২০১১ সালে দশঘর ইউনিয়নের ইশাবদাউ গ্রামের হাজী আব্দুল মানিক হাইকোর্টে একটি রীট পিটিশন দায়ের করেন। যার কারনে আইনি জটিলতায় আটকে যায় নির্বাচনী কার্যক্রম। জগন্নাথপুরের অন্যান্য ইউনিয়নে নির্বাচনী উৎসব পালন করা হলেও মিরপুর ইউনিয়বাসির মধ্যে ছিল বেদনার সুর। সেই দু:খ কষ্ট থেকে ইউনিয়নবাসী নির্বাচনের দাবিতে মানববন্ধন, সভা, সমাবেশ, মিছিল মিটিংসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালনের মাধ্যমে আন্দোলন গড়ে তুলেন। একই জটিলনায় পড়ে পাশ্ববর্তী সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। দুটি ইউনিয়নের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে হাইকোর্টে বিচারাধীন থাকারিট পিটিশন ৮৫২৬/২০১৩ খারিজ করে দিয়ে আগামী ৬ মাসের মধ্যে ইউনিয়ন দুটিতে নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিচারপতি মোঃ আশরাফুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর বেঞ্চ গত বছরের ২৮ আগষ্ট এই আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুধ্বে উচ্চ আদালতে আপিল করা হলেও আবারও স্থগিত করা হয় নির্বাচনী কার্যক্রম। সম্প্রতি আইনি জটিলতা নিরসন হওয়ায় নির্বাচন কমিশন গত মঙ্গঁলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দেশের ৮টি উপজেলা ও ১২৩টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তফশিল ঘোষনা করেন। এ খবরে এলাকার লোকজনের মধ্যে আনন্দ উৎসব শুরু হয়। সেই সঙ্গে প্রার্থী সমর্থকরাও নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। তবে দশঘর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তফশিল ঘোষনা হয়নি।
মিরপুর ইউনিয়নের মীরপুর গ্রামের আবুল বাশার বলেন, গণমাধ্যমে ইউনিয়নের তফশিল ঘোষনার পর পর মিরপুর ইউনিয়নবাসীর মধ্যে আনন্দ উচ্ছাস দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকা ইউনিয়নবাসী নির্বাচনে ভোট দিতে উম্মুখ হয়ে আছেন।
একই ইউনিয়নের রতিয়ারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মিয়া মোঃ সুহেল বলেন, ১৬ বছর ধরে নির্বাচন না হওয়ায় ইউনিয়নবাসি উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। তাই দীর্ঘদিন পর আইনি জটিলতার নিরসন হওয়ায় আমাদের ইউনিয়নে এখন নির্বাচনী বাতাস বইছে।
মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জমির উদ্দিন বলেন, মামলা জটিলতা সম্পন্ন হওয়ায় নির্বাচণের তফশিল ঘোষনা করা হয়েছে। নির্বাচনে তিনি অংশে নেবেন বলে জানান।
সুনামগঞ্জ নির্বাচন কর্মকর্তা মুরাদ উদ্দিন হাওলাদার বুধবার বলেন, উচ্চ আদালতের মামলা জটিলতায় মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আটকে যায়। মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন বিষয়ে আমরা অফিসিয়াল আদেশ পেয়েছি। তফশিল অনুযায়ী ১৪ অক্টোবর এ ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
Leave a Reply